ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি: “বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না!”
কলকাতা, ২১ জুলাই ২০২৫: আজ ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) বার্ষিক শহিদ দিবস সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জননেত্রী হিসেবে জনতার উদ্দেশে জোরালো ভাষণ দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ১৩ জন শহিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সমাবেশে তিনি বাংলার ঐক্য, ভাষা আন্দোলন, এবং রাজ্যের উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর ভাষণে বিজেপি-র বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা, কেন্দ্রের বৈষম্য, এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উঠে এসেছে। লক্ষাধিক সমর্থকের উপস্থিতিতে ধর্মতলার এই সমাবেশ বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কারা উপস্থিত ছিলেন?
এই বৃহৎ সমাবেশে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব, সাংসদ, বিধায়ক, এবং হাজার হাজার দলীয় কর্মী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন:
- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ।
- ফিরহাদ ববি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী।
- অরূপ বিশ্বাস, রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী।
- সুব্রত বক্সী, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি।
- এছাড়াও, সমাবেশে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্য, এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের যুব ও মহিলা শাখার প্রতিনিধিরা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন। সমাবেশে উপস্থিতির সংখ্যা প্রায় ২.৫ লক্ষ ছাড়িয়েছিল বলে সূত্রের খবর।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বাংলার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্কতা, এবং ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর ভাষণের প্রধান পয়েন্টগুলো হল:
- ভাষা আন্দোলনের ডাক:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে বলেন, “বাংলা আমাদের পরিচয়, আমাদের গর্ব। আমরা একটানা ভাষা আন্দোলন চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে পৌঁছায়।” তিনি স্কুল ও কলেজে বাংলা ভাষার শিক্ষার উপর আরও জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। - বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি:
বিজেপি-র বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে মমতা বলেন, “বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এক, আমরা কাউকে ভাগ করতে দেব না।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অভিযোগ তুলে বলেন, “তারা আমাদের তহবিল বন্ধ করছে, কিন্তু আমরা বাংলার উন্নয়ন থামাব না।” - বেকারত্ব হ্রাসের দাবি:
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “গত কয়েক বছরে আমরা বাংলায় ৪০% বেকারত্বের হার কমিয়েছি। আমাদের সরকার শিল্প, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি নতুন চাকরির সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। - দুর্গা-অঙ্গন প্রকল্প:
মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য নতুন ‘দুর্গা-অঙ্গন’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন মমতা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, “মহিলারা বাংলার শক্তি, তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি।” - ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি:
তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “২০২৬-এর নির্বাচনে আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। বিজেপির মিথ্যা প্রচারের জবাব দেবে বাংলার জনগণ।” তিনি দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। - কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ:
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের প্রাপ্য তহবিল দেওয়া হচ্ছে না। তবুও আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব।”

২১ জুলাই শহিদ দিবস তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভোটার আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করার দাবিতে আন্দোলনের সময় ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে মমতার উত্থানের একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। প্রতি বছর এই দিনে তৃণমূল শহিদদের শ্রদ্ধা জানায় এবং দলীয় শক্তি প্রদর্শন করে। এবারের সমাবেশে মমতার ভাষণ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি রূপরেখা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সমাবেশে উপস্থিত জনতা মমতার ভাষণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকে বলেন, “দিদির কথায় আমরা অনুপ্রাণিত। বাংলার জন্য তিনি সবসময় লড়াই করেন।” সামাজিক মাধ্যমেও মমতার ভাষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। একজন সমর্থক লিখেছেন, “মমতা দিদি আমাদের গর্ব। বাংলার ঐক্য ও ভাষার জন্য তাঁর আন্দোলন আমাদের শক্তি দেয়।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১ জুলাইয়ের ভাষণ শুধু শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যই নয়, বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। তাঁর ভাষা আন্দোলনের ডাক, বিজেপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি, এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাংলার জনগণের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে। আগামী দিনে তৃণমূলের এই সমাবেশ রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

