ঢাকায় এসিসি সভায় টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা চূড়ান্ত, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা
ঢাকা, ২৭ জুলাই ২০২৫: এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ১৭তম সংস্করণ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) অনুষ্ঠিত হবে। এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের টুর্নামেন্টে পুজোর আগেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে ঢাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ভেন্যু, দলের বিবরণ এবং ভারতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।
এশিয়া কাপ ২০২৫: দল ও ফরম্যাট
এশিয়া কাপ ২০২৫-এ মোট আটটি দল অংশ নেবে, যারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত। গ্রুপ এ-তে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। গ্রুপ বি-তে রয়েছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং হংকং। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল সুপার ফোর পর্বে উত্তীর্ণ হবে, এবং সেখান থেকে শীর্ষ দুটি দল ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালে মুখোমুখি হবে। টুর্নামেন্টে মোট ১৯টি ম্যাচ দুবাই এবং আবুধাবির মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ৯ সেপ্টেম্বর হংকং-এর বিপক্ষে মাঠে নামবে।
বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে থাকবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দলে থাকবেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তরুণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই টুর্নামেন্টকে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “আমাদের দল শক্তিশালী এবং এশিয়া কাপে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্স দেখাতে প্রস্তুত।”
মূল তথ্যের ঝলক
- তারিখ: ৯-২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ভেন্যু: সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই ও আবুধাবি)
- দল: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, হংকং, ওমান, UAE
- আয়োজক বোর্ড: BCCI (তবে খেলাগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যু UAE-তে)
- বৈঠক স্থান: ঢাকা (প্রধানত ভার্চুয়াল উপস্থিতি)
- বিশেষ ম্যাচ: ভারত-পাকিস্তান (১৪ সেপ্টেম্বর গ্রুপপর্ব)
- বাংলাদেশের লক্ষ্য: প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ শিরোপা জয়
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ: বিস্তারিত
এশিয়া কাপের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচটি হলো ভারত বনাম পাকিস্তান, যা ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচটি গ্রুপ পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই, যেখানে ভারতীয় দলের নেতৃত্বে থাকবেন রোহিত শর্মা। দলে থাকবেন বিরাট কোহলি, জসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা এবং তরুণ ব্যাটার শুভমান গিল। পাকিস্তান দলের নেতৃত্বে থাকবেন বাবর আজম, এবং দলে শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং ফখর জামানের মতো তারকারা রয়েছেন।
গত এশিয়া কাপে (২০২৩) ভারত পাকিস্তানকে সুপার ফোর পর্বে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে নাকি পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে, তা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। ম্যাচটি দুবাইয়ের দ্রুত পিচে খেলা হবে, যা ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হলেও পেসারদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ভারতের বুমরাহ এবং পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদির মধ্যে দ্বৈরথ এই ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ হবে।
২৪ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসিসি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় টুর্নামেন্টের ভেন্যু, সময়সূচি এবং দলের বিবরণ চূড়ান্ত করা হয়। এই সভায় এসিসি’র ২৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং এসিসি চেয়ারম্যান মোহসিন নকভি সভায় নেতৃত্ব দেন। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা ভার্চুয়ালি অংশ নেন। শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ওমান এবং হংকং-এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
সভার প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে টুর্নামেন্টের ভেন্যু নির্ধারণ। ভারত প্রাথমিকভাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পেলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের জন্য নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে ইউএই নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশ এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে, যা ভারত ও পাকিস্তানের সম্মতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিসিবি’র কূটনৈতিক দক্ষতা টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন নিশ্চিত করেছে।
ভারতের অংশগ্রহণ: কূটনৈতিক সমাধান
ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় ছিল, বিশেষ করে মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ায়, এবং বিসিসিআই প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এসিসি সভায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে, বাংলাদেশের মধ্যস্থতায় এবং এসিসি চেয়ারম্যান মোহসিন নকভির প্রচেষ্টায় ভারত ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দেয়।
বিসিসিআই এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী তিন বছর ভারত বা পাকিস্তানে আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে। এই চুক্তির ফলে ভারত ইউএইতে এশিয়া কাপে অংশ নিতে সম্মত হয়। ভারতের প্রথম ম্যাচ ১০ সেপ্টেম্বর ইউএই-এর বিপক্ষে, এবং ১৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ক্রিকেট বিশ্বের নজর কাড়বে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ: বিস্তারিত ও শ্রীসন্থের প্রতিবাদ
এশিয়া কাপের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচটি হলো ভারত বনাম পাকিস্তান, যা ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতীয় দলের নেতৃত্বে থাকবেন রোহিত শর্মা, এবং দলে থাকবেন বিরাট কোহলি, জসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা এবং শুভমান গিল। পাকিস্তানের নেতৃত্বে থাকবেন বাবর আজম, এবং দলে রয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং ফখর জামান। গত এশিয়া কাপে (২০২৩) ভারত পাকিস্তানকে সুপার ফোর পর্বে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। এই ম্যাচটি দুবাইয়ের দ্রুত পিচে খেলা হবে, যা ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হলেও পেসারদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তবে, এই ম্যাচ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীসন্থের প্রতিবাদের কারণে। পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে এই ম্যাচ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। শ্রীসন্থ একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে বলেন,
“পড়শি দেশের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা হোক, তা আমি একেবারেই চাই না। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে, তা ভুলে যাওয়া যায় না। বিসিসিআই-কে আমার অনুরোধ, এই ম্যাচ বাতিল করা হোক।”
তাঁর এই মন্তব্য ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যদিও বিসিসিআই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
টুর্নামেন্টের ভেন্যু ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব
এশিয়া কাপ দুবাই এবং আবুধাবির তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে, তবে সম্ভবত দুটি ভেন্যু ব্যবহৃত হবে। এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ভেন্যুগুলো নির্বাচিত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। সনি পিকচার্স নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া ২০২৪ সালে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে এশিয়া কাপের মিডিয়া অধিকার অর্জন করেছে। এই ম্যাচটি বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগী দল হিসেবেই নয়, বরং টুর্নামেন্টের পরিকল্পনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিসিবি’র কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। এশিয়া কাপ ২০২৫ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে, এবং ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এর মূল আকর্ষণ। বাংলাদেশ দল তাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিয়ে এই টুর্নামেন্টে ইতিহাস গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

