বিশ্ব অঙ্গন, তরণ্য, এবং বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স: নিউটাউন এখন বিশ্বমানের কেন্দ্র
কলকাতা, ১৮ জুলাই ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউটাউনকে বিশ্বমানের শহরে রূপান্তরিত করার পথে আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি নিউটাউনে ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, যা গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট প্রদানের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও, তিনি ‘তরণ্য’ নামে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র, বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স ‘সুসম্পন্ন’, এবং বাংলার প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হাবের উদ্বোধন করেছেন। এই প্রকল্পগুলো নিউটাউনকে শুধু কলকাতার একটি উপশহর নয়, বরং বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
নিজন্ন ও সুজন্ন: গরিব-মধ্যবিত্তের স্বপ্নের ঠিকানা
নিউটাউনের রাজারহাটে ৭ একর জমির উপর নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পে প্রায় ২,০০০ ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মোট ব্যয় হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “জমির দাম নেওয়া হয়নি। সরকার এই জমি বিনামূল্যে দিয়েছে এবং ফ্ল্যাটগুলো বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে দেওয়া হবে।” এই ফ্ল্যাটগুলো লটারির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে, যা নিশ্চিত করবে স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়া। এই উদ্যোগ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনের স্বপ্ন পূরণের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। মমতা বলেন, “আমরা চাই, প্রতিটি মানুষের মাথার উপর ছাদ থাকুক। নিউটাউন এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।”

নিউটাউনে ‘তরণ্য’ নামে একটি অত্যাধুনিক বিনোদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের জন্য একটি নতুন ঠিকানা হয়ে উঠবে। এছাড়াও, ‘সুসম্পন্ন’ নামে বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স নিউটাউনের ক্রমবর্ধমান যানজট সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় প্রায় ৪৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, যা রাজ্যের উন্নয়নের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।
নিউটাউনের ইকো পার্কের কাছে ২৫ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে ‘বিশ্ব অঙ্গন’ বা আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি ও বিনোদন পার্ক (IITEC)। এই প্রকল্পটি হাউসিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (হিডকো) এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেলে গড়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি হবে সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, এবং সৃজনশীলতার একটি বিশ্বমানের কেন্দ্র। আমরা চাই নিউটাউন কলকাতার শুধু একটি উপশহর নয়, বিশ্বের মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠুক।” এই পার্কে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থান, আধুনিক প্রযুক্তি কেন্দ্র, এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পণ্য প্রদর্শনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
বাংলার প্রথম এআই হাব: নিউটাউনের ডিজিটাল বিপ্লব
নিউটাউন এখন শুধু আবাসন বা বিনোদনের কেন্দ্র নয়, এটি বাংলার প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হাবের আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। এই হাবটি তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্টদের মতো টিসিএস, উইপ্রো, কগনিজান্ট, এবং আইটিসি ইনফোটেকের মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিউটাউনকে পূর্ব ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এআই হাব নিউটাউনকে বিশ্বের প্রযুক্তি মানচিত্রে নিয়ে যাবে। এটি আমাদের যুব সমাজের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।” বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি টেক হাবের সাফল্যের পর এই এআই হাব নিউটাউনকে ডিজিটাল বিপ্লবের অগ্রভাগে নিয়ে যাচ্ছে।

নিউটাউন: স্মার্ট গ্রিন সিটি থেকে বিশ্বমানের শহর
নিউটাউন ইতিমধ্যে ভারত সরকার কর্তৃক ‘সোলার সিটি’ এবং ‘স্মার্ট গ্রিন সিটি’ হিসেবে স্বীকৃত। হিডকোর তত্ত্বাবধানে এই শহরে ইকো পার্ক, রবীন্দ্র তীর্থ, নজরুল তীর্থ, এবং মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়ামের মতো প্রকল্প ইতিমধ্যে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিউটাউনের ১০.৫ কিলোমিটার বিস্তৃত বিশ্ব বাংলা সরণিতে ভারতের প্রথম ওয়াই-ফাই রোড কানেক্টিভিটি চালু হয়েছে, যা এই শহরকে ডিজিটাল যুগের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে নিউটাউন এখন শুধু কলকাতার একটি উপশহর নয়, বরং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শহর হিসেবে গড়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও কর্মসংস্থান
নিউটাউনের এই নতুন প্রকল্পগুলো রাজ্যের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজ্য ২৫,০০০ কোটি টাকার ১০টি নতুন শিল্প বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে, যা প্রায় ৭০,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। নিউটাউনের এআই হাব এবং বিশ্ব অঙ্গনের মতো প্রকল্পগুলো এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। এছাড়াও, ২৩টি জেলায় নতুন শপিং মল এবং বাজার নির্মাণের পরিকল্পনা স্থানীয় কারিগর ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি কর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিউটাউন আমাদের গর্ব। আমরা এখানে শুধু ইট-কাঠের শহর নয়, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, এবং মানবিকতার একটি মিলনস্থল গড়ে তুলছি।” তাঁর নেতৃত্বে নিউটাউন এখন কলকাতার দ্বিতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে সল্টলেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এআই হাব এবং বিশ্ব অঙ্গনের মতো প্রকল্পগুলো বাংলাকে বিশ্বের প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান দেবে।
নিউটাউনের এই নতুন প্রকল্পগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রমাণ। নিজন্ন ও সুজন্ন আবাসন প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে, তরণ্য ও সুসম্পন্ন নিউটাউনকে আরও আধুনিক করবে, এবং বিশ্ব অঙ্গন ও এআই হাব বাংলাকে বিশ্বের মঞ্চে নিয়ে যাবে। নিউটাউন এখন শুধু একটি শহর নয়, বরং বাংলার স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক।

