২০ আগস্ট ২০২৫: ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন মুম্বই, মৃত্যু ৩, নিখোঁজ ২, এনডিআরএফ মোতায়েন
মুম্বই, ২০ আগস্ট ২০২৫: ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বইয়ে ভারী বৃষ্টির কারণে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে, ট্রেন ও ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, মুম্বই এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে কমপক্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এনডিআরএফ (জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী) মোতায়েন করেছে এবং স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি: জলমগ্ন মুম্বই
গত ১৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টির কারণে মুম্বইয়ে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শহরের অন্ধেরি, বান্দ্রা, মালাদ, গোরেগাঁও এবং দাদরের মতো এলাকায় জল জমে যাওয়ায় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেন সার্ভিস ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ যাত্রী অসুবিধায় পড়েছেন। সেন্ট্রাল রেলওয়ের অনেক ট্রেন বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে, এবং ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি নজর রাখছে।
মুম্বই বিমানবন্দরে (ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) ভারী বৃষ্টির কারণে অন্তত ৫টি ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হয়েছে এবং বহু ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে বলেছে, “যাত্রীরা ফ্লাইটের স্ট্যাটাস চেক করে নিন এবং বিমানবন্দরে আগেভাগে পৌঁছান।”
আইএমডি জানিয়েছে যে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, এবং শহরের লো-লাইং এলাকায় বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে। মহারাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলে, যেমন মারাঠওয়াড়া এবং থানে, পালঘর, রায়গড়, রত্নাগিরিতে ভারী বৃষ্টির কারণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১১ জন নান্দেড় এবং সম্ভাজিনগরে।
ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ: মৃত্যু ও নিখোঁজ
ভারী বৃষ্টির কারণে মুম্বইয়ে কমপক্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে:
- একজন যুবক, যিনি জল জমা রাস্তায় পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
- একটি শিশু, যা বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ে মারা যায়।
- একজন বয়স্ক ব্যক্তি, যিনি জলমগ্ন এলাকায় ডুবে যান।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছে দুজন যুবক, যারা জল জমা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় লাপাত্তা হয়ে যান। মহারাষ্ট্র সরকারের মতে, ১৫ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি-সংক্রান্ত ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১১ জন মারাঠওয়াড়া অঞ্চলে। বন্যা-প্রবণ এলাকায় এনডিআরএফ ২৯৩ জনকে উদ্ধার করেছে।

সরকারের পদক্ষেপ: কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে
মহারাষ্ট্র সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে:
- এনডিআরএফ মোতায়েন: ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) দল মুম্বই এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জল জমা এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার এবং বাস্তুচ্যুতদের জন্য ত্রাণ শিবির তৈরিতে কাজ করছে।
- স্কুল ও অফিস বন্ধ: মুম্বইয়ের অনেক স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে, এবং কিছু কোম্পানি কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে।
- ট্রেন ও ফ্লাইট মনিটরিং: রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন সার্ভিসের উপর নজর রাখছে এবং বাতিল ট্রেনের তথ্য প্রকাশ করছে। বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।
- জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা: মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি) জল জমা এলাকায় পাম্পিং স্টেশন চালু করেছে এবং রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে।
- সাহায্য হেল্পলাইন: মহারাষ্ট্র সরকার ১৯১৬ এবং ১০৭৭ নম্বরে জরুরি সাহায্য হেল্পলাইন চালু করেছে। বাসিন্দাদের উঁচু স্থানে যাওয়ার এবং জল জমা এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএমডি-এর মতে, মুম্বইয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, এবং সরকার পরিস্থিতি নজর রাখছে।
মুম্বইয়ে ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা এবং এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জল জমার পরিস্থিতি শহরবাসীদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং এনডিআরএফ-এর উদ্ধার কার্যক্রম ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করছে, তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পরিস্থিতিকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

