২৯ জুলাই ২০২৫: মোহনবাগান দিবসের উৎসাহ-উদ্দীপনা
২৯ জুলাই ২০২৫ কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। মোহনবাগান দিবস, যা প্রতি বছর এই দিনে পালিত হয়, মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের ১৯১১ সালের ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড জয়ের স্মরণে উদযাপিত হয়। এই জয় শুধু খেলার মাঠের বিজয়ই ছিল না, বরং পরাধীন ভারতের বুকে স্বাধীনতার এক প্রতীকী ঘোষণা ছিল। এই বছর মোহনবাগান দিবস পালিত হয়েছে কলকাতার ময়দান, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন এবং নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। দিনভর এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক, বিশেষ অতিথি এবং সেলিব্রিটিরা। এই নিবন্ধে আমরা গতকালের দিনব্যাপী কর্মসূচি, বিশেষ অতিথি এবং এই দিনের গুরুত্ব তুলে ধরব।
দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ মৌলিক এবং আমাদের ওয়েবসাইট bengalinewstoday.in-এর জন্য লেখা। আরও আপডেটের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
মোহনবাগান দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য
১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব ভারতের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সফল ফুটবল ক্লাবগুলির মধ্যে একটি। ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই, মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল। খালি পায়ে খেলা এই বাঙালি তরুণদের জয় ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী বিজয়। এই ঘটনা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং প্রতি বছর মোহনবাগান দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২০২৫ সালে এই দিনটি ক্লাবের ১৩৬ বছরের ঐতিহ্য এবং আইএসএল-এর সাম্প্রতিক সাফল্যের উদযাপন হিসেবে আরও বিশেষ ছিল।

গতকালের দিনব্যাপী কর্মসূচি
২৯ জুলাই ২০২৫ মোহনবাগান দিবস পালিত হয়েছে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যা কলকাতার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল। নীচে দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি দেওয়া হল:
সকাল ৮:০০ – পতাকা উত্তোলন ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
- স্থান: মোহনবাগান ক্লাব প্রাঙ্গণ, ময়দান
- কী ঘটেছে: দিনের শুরু হয় মোহনবাগানের সবুজ-মেরুন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ড জয়ী “অমর একাদশ”-এর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। কলকাতার উপমহানাগরিক অতীন ঘোষ এবং ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং একটি সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা সভার মাধ্যমে ক্লাবের ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানানো হয়। সমর্থকরা সকাল থেকেই ক্লাব প্রাঙ্গণে ভিড় করেছিলেন, সবুজ-মেরুন বেলুন এবং ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছিল চারপাশ।
সকাল ১০:০০ – ফুটবল ক্লিনিক ও তরুণ প্রতিভা শিকার
- স্থান: মোহনবাগান ক্লাব গ্রাউন্ড
- কী ঘটেছে: তরুণ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি ফুটবল ক্লিনিক আয়োজিত হয়, যেখানে মোহনবাগানের বর্তমান খেলোয়াড় রয় কৃষ্ণা এবং দিমিত্রি পেট্রাটোস তরুণদের কোচিং দেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক তরুণ এই ক্লিনিকে অংশ নিয়েছিল। মোহনবাগানের ইয়ুথ অ্যাকাডেমির জন্য প্রতিভা শিকার কর্মসূচিও এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে ফুটবলের প্রতি উৎসাহ বাড়িয়েছে এবং ক্লাবের ভবিষ্যৎ তারকা খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
দুপুর ১২:৩০ – সমর্থকদের মিছিল
- স্থান: ময়দান থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন
- কী ঘটেছে: হাজার হাজার মোহনবাগান সমর্থক সবুজ-মেরুন জার্সি, পতাকা এবং ব্যানার নিয়ে কলকাতার রাস্তায় মিছিলে অংশ নেন। এই মিছিল কলকাতার ময়দান থেকে শুরু হয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। সমর্থকরা “আমরা মোহনবাগান” গান গেয়ে এবং নাচের মাধ্যমে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এই মিছিল কলকাতার রাস্তায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়।
বিকেল ৩:০০ – প্রীতি ফুটবল ম্যাচ
- স্থান: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন
- কী ঘটেছে: মোহনবাগানের বর্তমান দল এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়দের একটি দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে প্রাক্তন তারকা গৌতম সরকার এবং বর্তমান তারকা হুগো বুমোস মাঠে নামেন। ম্যাচটি ছিল সমর্থকদের জন্য একটি নস্টালজিয়া এবং নতুন প্রতিভার মিশ্রণ। মাঠের চারপাশে ফ্যান জোনে খাবারের স্টল, মোহনবাগান মার্চেন্ডাইজ বিক্রি এবং ফটো বুথ স্থাপন করা হয়। সমর্থকরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেলফি তুলে এই মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখেন।
সন্ধ্যা ৬:০০ – পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- স্থান: নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম
- কী ঘটেছে: দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এই বছর মোহনবাগান রত্ন সম্মান দেওয়া হয় প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারকে, যিনি মোহনবাগানের জার্সিতে পেলের বিরুদ্ধে খেলে প্রশংসা পেয়েছিলেন। এছাড়া, সেরা সমর্থক গ্রুপ এবং ক্লাবের জন্য বিশেষ অবদানকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামও ছিল, যেখানে বাংলা সঙ্গীত, নৃত্য এবং নাটক পরিবেশিত হয়।
বিশেষ অতিথি ও সেলিব্রিটি
মোহনবাগান দিবস ২০২৫-এর অনুষ্ঠানকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করতে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সেলিব্রিটি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন:
- সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং মোহনবাগানের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং সমর্থকদের উদ্দেশে একটি উৎসাহব্যঞ্জক বক্তৃতা দেন।
- সুনীল ছেত্রী: ভারতীয় ফুটবলের আইকন এবং মোহনবাগানের প্রাক্তন খেলোয়াড় সুব্রত ভট্টাচার্যের জামাই। তিনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ক্লাবের ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেন।
- অতীন ঘোষ: কলকাতার উপমহানাগরিক। তিনি সকালের শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ক্লাবের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
- রূপম ইসলাম: জনপ্রিয় বাংলা রক ব্যান্ড ফসিলস-এর ফ্রন্টম্যান। তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ পারফরম্যান্স দিয়ে সমর্থকদের মন জয় করেন।
- মুনমুন সেন: বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং মোহনবাগান সমর্থক। তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং সমর্থকদের সঙ্গে মিশে আনন্দ ভাগ করে নেন।
এছাড়া, মোহনবাগানের বর্তমান দলের তারকা খেলোয়াড়রা, যেমন রয় কৃষ্ণা, দিমিত্রি পেট্রাটোস এবং সুবাশিস বসু, সমর্থকদের সঙ্গে মিশে এবং অটোগ্রাফ সেশনে অংশ নিয়ে দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলেন।
সমর্থকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ
- মোহনবাগান মার্চেন্ডাইজ: ক্লাবের অফিসিয়াল জার্সি, মাফলার এবং সীমিত সংস্করণের “১৯১১ শিল্ড জয়” স্মারক জার্সি বিক্রির জন্য স্টল স্থাপন করা হয়েছিল। সমর্থকরা উৎসাহের সঙ্গে এই মার্চেন্ডাইজ কিনেছেন।
- ফ্যান জোন: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ফ্যান জোনে ফুটবল-থিমযুক্ত গেম, ফটো বুথ এবং খাবারের স্টল ছিল। সমর্থকরা এখানে দিনভর আনন্দ উপভোগ করেন।
- লাইভ স্ট্রিমিং: যারা সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তাদের জন্য মোহনবাগানের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং bengalinewstoday.in এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়।
টিকিট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্রীতি ম্যাচ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রবেশের জন্য টিকিট বাধ্যতামূলক ছিল। ক্লাব সদস্যরা বিনামূল্যে একটি করে টিকিট পেয়েছেন, এবং সাধারণ সমর্থকরা ৫০ টাকায় টিকিট কিনতে পেরেছেন। খাবারের কুপনও পাওয়া যায়, যার মূল্য ছিল ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ব্যাগ চেকিং এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশিকা ছিল।
মোহনবাগান দিবস ২০২৫ ছিল কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় উৎসব। পতাকা উত্তোলন থেকে শুরু করে প্রীতি ম্যাচ, ফুটবল ক্লিনিক এবং পুরস্কার বিতরণী—প্রতিটি অনুষ্ঠানে ছিল সবুজ-মেরুনের আবেগ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল ছেত্রী এবং রূপম ইসলামের মতো তারকাদের উপস্থিতি এই দিনকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলেছে। মোহনবাগানের সমর্থকরা এই দিনে তাদের প্রিয় ক্লাবের ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ সাফল্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।
আপনি কীভাবে মোহনবাগান দিবস উদযাপন করেছেন? কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন


https://bengalinewstoday.in/mohunbagan-dibas-2025-kolkata-report/