জনসভায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি, বিজেপির প্রতি আশার বার্তা
দুর্গাপুর, ১৮ জুলাই ২০২৫: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এক জমকালো জনসভায় ভাষণ দিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, রেল, এবং সড়ক খাতে ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন। তবে, তাঁর ভাষণের মূল আকর্ষণ ছিল তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা এবং বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপির প্রতি জনগণের আস্থার আহ্বান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি এই সভাকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনায় পরিণত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সকালে বিহারের মোতিহারিতে ৭,২০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধনের পর দুর্গাপুরে পৌঁছান। তিনি এখানে তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, রেল সংযোগ বৃদ্ধি, এবং সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। এই প্রকল্পগুলো পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোদী বলেন, “এই প্রকল্পগুলো বাংলার যুব সমাজের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। আমরা চাই, বাংলা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক।”
দুর্গাপুরের জনসভায় মোদী ‘বিকশিত ভারত, বিকশিত বাংলা’র দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘প্রধানমন্ত্রী ধান-ধান্য কৃষি যোজনা’ ২০২৫-২৬ থেকে ১০০টি জেলায় কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোও রয়েছে। এই যোজনা কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা
মোদীর ভাষণে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের ‘গুণ্ডা ট্যাক্স’ এবং ‘মাফিয়া রাজ’ বাংলায় বিনিয়োগের পথে বড় বাধা। তাদের নীতি শুধু দুর্নীতিকে সমর্থন করে, উন্নয়নকে নয়।” তিনি আরও বলেন, “বাংলার মানুষ তৃণমূলের অপশাসনের জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। তারা এখন বিজেপির দিকে তাকিয়ে আছেন, কারণ একমাত্র বিজেপিই পারে বাংলাকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে।”
মোদী তৃণমূল সরকারের উপর সন্ত্রাস, দুর্নীতি, এবং তোষণ নীতির অভিযোগ তুলে বলেন, “বাংলার মা-বোনেরা নিরাপত্তা চান, যুবকরা কর্মসংস্থান চান, আর বাংলার জনগণ শান্তি ও সমৃদ্ধি চান। বিজেপি তাদের এই স্বপ্ন পূরণ করবে।” তিনি দুর্গাপুরের জনতার উদ্দেশে বলেন, “বাংলাকে মুক্ত করতে হবে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, এবং তোষণের রাজনীতি থেকে। বিজেপিকে একবার সুযোগ দিন, আমরা বাংলাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।”
জনসভায় উপস্থিতি: বৃষ্টিতেও জনতার ঢল
দুর্গাপুরের এই জনসভায় বৃষ্টি সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিজেপি নেতা ও কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলা ও যুব সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা অমরনাথ শাক্য এবং অন্যান্য জেলা নেতারাও জনতার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন।
বৃষ্টির মধ্যেও জনতার উৎসাহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের সমর্থন এবং বিজেপির প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রতিফলন। সামাজিক মাধ্যমে বিজেপি সমর্থকরা লিখেছেন, “বাংলার মা-বোনেদের চোখে ভরসা, যুবদের মনে আগুন – এবার উন্নয়নের পথেই হাঁটবে বাংলা, মোদীর সাহসে গড়ে উঠবে নতুন ভবিষ্যৎ।”
মোদীর এই সফর এমন এক সময়ে হলো যখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। তৃণমূলের শাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি রাজ্যে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। মোদীর এই জনসভা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ পরিবর্তন চান। তারা জানেন, বিজেপি তাদের সেই পরিবর্তন এনে দেবে।”
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনও এই জনসভা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদীর এই সফর এবং তাঁর ভাষণ তৃণমূলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
উপসংহার
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুর সফর পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং বিজেপির রাজনৈতিক প্রচারের একটি শক্তিশালী প্রদর্শন। তাঁর ভাষণে উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তার মিশ্রণ বাংলার জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ। আগামী দিনে এই সফর কীভাবে রাজ্যের রাজনীতি ও উন্নয়নের গতিপথকে প্রভাবিত করে, তা সবার নজরে থাকবে।

