সেপ্টেম্বরে ইসলামাবাদ সফরের পর ভারতেও যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ইসলামাবাদ, ১৭ জুলাই ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন বলে পাকিস্তানের দুটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল সূত্রের বরাতে জানিয়েছে। এটি হবে প্রায় দুই দশকের মধ্যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাকিস্তানে প্রথম সফর, যা ২০০৬ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের সফরের পর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে সফরটি নিয়ে ইতিমধ্যে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সম্ভাব্য সফর মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। গত জুন মাসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের একটি অভূতপূর্ব বৈঠক এই সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। ওই বৈঠকে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে পাকিস্তানের ভূমিকার জন্য ট্রাম্প আসিম মুনিরের প্রশংসা করেন। এছাড়া, পাকিস্তান ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিরসনে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে।
ট্রাম্পের এই সফরে মূলত বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে আলোচনার উপর জোর দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক গত কয়েক বছরে কিছুটা স্থবির ছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ আবার গতি পেয়েছে। ট্রাম্পের এই সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এবং আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও আলোচনার অংশ হতে পারে, কারণ ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে এই বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের সফরের সময় ১৮ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদে সংক্ষিপ্ত সফরের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে, যা ভারতের কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে বা ফেরার সময় হতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল এই সফরকে একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
পাকিস্তানের জনসাধারণ এই সফর নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগের দ্বার হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে সতর্ক রয়েছেন, বিশেষ করে জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কারণে। তবে, পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ বলেছেন, এই সফর পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
যদিও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সফরের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ দেয়নি, তবে স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে সফরের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে, কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে ট্রাম্প একই সময়ে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন, যা পাকিস্তানি মিডিয়ার দাবির বিপরীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রাম্পের ভূমিকা
ট্রাম্পের এই সফর দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁর কূটনৈতিক প্রভাবকে আরও জোরদার করতে পারে। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ রোধ করেছেন, যদিও ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, এবং ট্রাম্প দাবি করেন যে তাঁর বাণিজ্য চাপের মাধ্যমে তিনি এই সংকট নিরসনে সাহায্য করেছেন। তবে, ভারত জানিয়েছে যে পাকিস্তানের ডিজিএমও-এর উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হয়েছিল।
ট্রাম্পের সফরের সময় ভারতের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় কাশ্মীর ইস্যু এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তিনি ২০২০ সালে ভারত সফরের সময় কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, যা এই অঞ্চলে তাঁর কূটনৈতিক উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও আঞ্চলিক প্রভাব
ট্রাম্পের পাকিস্তান সফরের পর ভারত সফরের খবর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এই সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই সফর দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব বাড়াতে পারে। ট্রাম্পের এই সফর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু এবং সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য পাকিস্তান সফর দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কূটনীতির একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এই সফর পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণের অভাব এবং যুক্তরাজ্য সফরের খবর এই সফর নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। আগামী দিনে এই সফর কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, তা সবার নজরে থাকবে।

