পুর, ১৪ জুলাই ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন জল্পনার সৃষ্টি করেছে একটি খবর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগামী ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। গত কয়েক মাস ধরে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাঁর অনুপস্থিতি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিঘায় সাক্ষাতের পর তাঁর দলবদল নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। তবে এই আমন্ত্রণের মাধ্যমে বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের কীর্তি আজাদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকে দিলীপ ঘোষকে দলের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে তেমন দেখা যায়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাগুলোতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবদলের জল্পনা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তবে দিলীপ ঘোষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি মন্দির দর্শনের জন্য গিয়েছিলেন, এবং এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।
মোদীর সভায় আমন্ত্রণ: নতুন সমীকরণ
আগামী ১৮ জুলাই দুর্গাপুর নয়া স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি জনসভায় ভাষণ দেবেন এবং একাধিক শিল্প প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এই সভায় দিলীপ ঘোষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দলের ঐক্য প্রদর্শনের একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান এবং বাঁকুড়া থেকে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ এই সভায় উপস্থিত থাকবেন।”
দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি দলের পুরনো কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এই আমন্ত্রণকে অনেকে দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুর্গাপুরের এই সভায় তাঁর উপস্থিতি দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে ঐক্যের বার্তা দেবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সভা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাই শহিদ দিবসের সভার ঠিক তিন দিন আগে এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিজেপির এক নেতার মতে, মোদী এই সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেবেন এবং রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল রাজ্যের যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের নেতা-কর্মীদের সম্পদ বাড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।”
দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি এই সভায় বিজেপির অভ্যন্তরীণ ঐক্যের একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। তাঁর সমর্থকদের মতে, এই আমন্ত্রণ তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ। তবে তিনি মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন কি না, তা নিয়ে এখনও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে।
দিলীপ ঘোষের অতীত ও ভবিষ্যৎ
দিলীপ ঘোষ ২০১৯ সালে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে ১৮টি লোকসভা আসন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে ২০২১ সালে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পরাজয় এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি তাঁর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এই আমন্ত্রণ তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি নতুন মোড় আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আগামীর সম্ভাবনা
দুর্গাপুরের এই সভা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর শিল্প প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য নয়, বরং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নতুন করে শক্তি প্রদর্শনের একটি সুযোগ হতে পারে। রাজ্য বিজেপির নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সমন্বয় কীভাবে গড়ে ওঠে, তা আগামী দিনে বঙ্গ রাজনীতির দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

