দলিত, গরিব ও অভিবাসীদের ভোটাধিকার সংকটে? সুপ্রিম কোর্টে মামলা, বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ
পাটনা, ১৫ জুলাই ২০২৫: বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের একটি সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। বিশেষ গভীর পর্যালোচনা (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ার আওতায় বিহারের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৩৫.৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিরোধী দলগুলো তীব্র সমালোচনা করছে, এবং সুপ্রিম কোর্টে এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে।
কেন এই নাম বাদ? নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা
নির্বাচন কমিশনের মতে, এই বিশেষ পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হল ভোটার তালিকার “বিশুদ্ধতা” নিশ্চিত করা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১২.৫ লাখ ভোটার মৃত, ১৭.৫ লাখ ভোটার স্থায়ীভাবে বিহার ছেড়ে চলে গেছেন, এবং ৫.৫ লাখ ভোটারের নাম একাধিকবার নথিভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, নেপাল, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের কিছু বিদেশি নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে, যাদের নামও বাদ দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া ভোটার তালিকাকে আধুনিক ও নির্ভুল করার জন্য অপরিহার্য।
বিরোধীদের ক্ষোভ: “গরিবদের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র”
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, এই সিদ্ধান্তকে “গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত” বলে অভিহিত করেছেন। তেজস্বী যাদব সতর্ক করে বলেছেন, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ৩,২০০ ভোটারের নাম বাদ পড়লে নির্বাচনের ফলাফল বদলে যেতে পারে। তারা অভিযোগ করেছেন, এই প্রক্রিয়া দলিত, গরিব এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি “ষড়যন্ত্র”। বিহারের উচ্চ দারিদ্র্য এবং অভিবাসনের হারের কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে অক্ষম, যা তাদের ভোটাধিকার হারানোর ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা, চাপে নির্বাচন কমিশন
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস এবং স্বরাজ পার্টির সদস্য যোগেন্দ্র যাদব সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এই প্রক্রিয়া সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে এবং এটি নাগরিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ডের মতো নথি ব্যবহার করে যাচাই প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছে। আগামী ২৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
নির্বাচন কমিশন ২৫ জুলাই পর্যন্ত ভোটারদের নথি জমা দেওয়ার সময় দিয়েছে। যারা এই সময়সীমার মধ্যে নথি জমা দিতে পারবেন না, তারা দাবি ও আপত্তির সময়কালেও সুযোগ পাবেন। তবে, পাটনার সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নথি ছাড়াও স্থানীয় তদন্তের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে, এই বিজ্ঞাপন তাদের চাপের কারণে প্রকাশিত হয়েছে।
ভোটারদের কী করণীয়?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৬.৬ কোটি ভোটার ইতিমধ্যে তাদের তথ্য ফর্ম জমা দিয়েছেন, যা রাজ্যের মোট ভোটারের ৮৮.১৮%। ভোটাররা নিজেদের নাম যাচাই করতে বা নতুন নাম নথিভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (voters.eci.gov.in) বা বিহারের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের ওয়েবসাইট (ceoelection.bihar.gov.in) ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, হেল্পলাইন নম্বর ১৯৫০-এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
এই ৩৫.৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া বিহারের নির্বাচনী ফলাফলের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার একটি কৌশল। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, অনেকে এটিকে “গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছেন। ১ অগাস্ট ড্রাফ্ট ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এই বিতর্ক আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিহারের ভোটারদের প্রতি আহ্বান, নিজেদের নাম ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় নথি জমা দিন। এই সংকটের মধ্যেও গণতন্ত্রের শক্তি বজায় রাখতে ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও আপডেটের জন্য বাংলানিউজটুডে-এর সঙ্গে থাকুন।

