নিম্নচাপ ও মৌসুমী অক্ষরেখার যৌথ প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে অস্বাভাবিক বৃষ্টি, পশ্চিমাঞ্চলে নদীগুলির জলস্তর ঊর্ধ্বমুখী।
কলকাতা, ৮ জুলাই:
টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল বাংলার মানুষ। সোমবার রাত থেকেই একটানা বর্ষণে ভিজে একসার রাজ্য। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় নিম্নচাপ ও মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবে এই অতিবৃষ্টি বলে জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
সাধারণত বর্ষার মৌসুমে বঙ্গোপসাগর থেকে রাজস্থান পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে মৌসুমী অক্ষরেখা, তবে এবার সেটি পুরোপুরি দক্ষিণবঙ্গের ওপর দিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শক্তিশালী নিম্নচাপ, যার অবস্থান এখন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপরেই। এর ফলে কলকাতা সহ শহরতলিতে জল জমে জনজীবন বিপর্যস্ত।

হাওয়া অফিসের মতে, সোমবার বিকেলের পর থেকে যে পরিমাণ বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল, বাস্তবে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কলকাতার বিভিন্ন অংশে যেমন যোধপুর পার্কে ১৯৫ মিমি, উলুবেড়িয়ায় ১১২ মিমি, দমদমে ৯৯ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। বসিরহাট, সল্টলেক, আলিপুর, ব্যারাকপুর, মানিকতলা, ক্যানিং-সহ বিভিন্ন জেলায় একই চিত্র।
🌊 বিপদ বাড়ছে পশ্চিমাঞ্চলেও
সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ এখন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল। ডুলুং, শিলাবতী-র মতো নদীগুলির জলস্তর বেড়ে চলেছে। আবহাওয়া দফতর আশঙ্কা করছে, আরও বৃষ্টি হলে এইসব নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে প্লাবন হতে পারে।
ডিভিসি ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, পাঞ্চেত থেকেও জল ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলত, দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর দুই ধারে — বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়ার অংশবিশেষ ও সোনামুখীতে প্লাবনের আশঙ্কা জোরালো।

🛑 সতর্কতা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, নিম্নচাপ কিছুটা ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ের দিকে সরলেও, তার আগেই বাংলার বিস্তীর্ণ অংশে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ওড়িশায় বৃষ্টি বাড়লে গালুডি ব্যারেজ থেকেও জল ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন সুবর্ণরেখা নদী প্লাবিত করতে পারে ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
উপগ্রহ চিত্র অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে এখনও প্রবল জলীয় বাষ্প ঢুকছে রাজ্যে, যার ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেই পূর্বাভাস।

☀️ আশার আলো?
আবহাওয়াবিদদের মতে, কাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে নিম্নচাপের গতিপথের ওপর। যদি সেটা দ্রুত সরতে পারে, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু যদি তা স্থায়ী হয়, তাহলে রাজ্যে বড়সড় বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

